শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ১০:২৮ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
ভারত থেকে বীজ আমদানিতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের পেঁয়াজচাষিরা

ভারত থেকে বীজ আমদানিতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের পেঁয়াজচাষিরা

স্বদেশ ডেস্ক:

দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজ বীজ না কিনে বাইরের দেশ থেকে আমদানি করা বীজ ব্যবহার করায় দেশের পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনকারী ও পেঁয়াজচাষি উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

শনিবার দুপুরে ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর রেলস্টেশন বাজারে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও বীজ ব্যবসায়ীদের এক সভায় এ অভিযোগ করা হয়।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা জানান, জেলার বেশ কয়েকজন অসাধু বীজ ব্যবসায়ী ভারত থেকে নিম্নমানের পেঁয়াজ বীজ এনে তা খুচরা এবং নানা নাম ব্যবহার করে টিনের কৌটাজাত করে দেশীয় বীজ বলে বিক্রি করেন। কৃষকেরা এসব বীজ লাগিয়ে ভালো ফলন পাননি। বেশিরভাগ পেঁয়াজ খেত হলুদ এবং লালবর্ণ হয়ে শুকিয়ে গেছে। মৌসুমী বীজ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিম্নমানের বীজ কিনে প্রতারণার শিকার কৃষকেরা। তারা একজোট হয়ে ক্ষতিপূরণের দাবিতে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে সভায় জানান তারা।

ফরিদপুর পেঁয়াজ ও পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনকারী সমিতির সভাপতি মো: ইসহাকের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন সমিতির সহ-সভাপতি আলকাছ ব্যাপারী, সাধারণ সম্পাদক আ: জলিল, যুগ্ন-সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, বীজ উৎপাদনকারী চাষী বক্তার খান ও আবু বক্কার সিদ্দিক প্রমুখ।

জানা গেছে, পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে সারাদেশে ফরিদপুর জেলা শীর্ষে রয়েছে। দেশের বেশিরভাগ পেঁয়াজ ও বীজ এ জেলা থেকে সারাদেশে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু এ বছর পেঁয়াজ আবাদ করে লোকসানের মুখে পড়েছেন কৃষকেরা। নিম্নমানের পেঁয়াজ বীজ লাগিয়ে প্রতারণার শিকার তারা। তাদের অভিযোগ, এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ভারত থেকে গোপনে নিম্নমানের পেঁয়াজ বীজ এনে নানা প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কাছে বিক্রি করেছেন। কিন্তু এসব বীজ থেকে চারা না গজানোর কারণে তাদের মাথায় হাত। গত বছর পেঁয়াজের দাম ভালো পাওয়ায় এ বছর বৃহত্তর ফরিদপুরের পাঁচটি জেলাতেই ব্যাপকহারে পেঁয়াজের আবাদ করেন কৃষকেরা। আর মৌসুমের শুরুতেই কৃষকেরা পড়েন ফাঁদে।

ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুরের কৃষক রফিক মণ্ডল, ভাঙ্গা উপজেলার জগদীশ মাঝি, রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার বাদশা শেখ, সদরপুরের জুলহাস খান, চরভদ্রাসন উপজেলার আবুল খায়ের, সালথা উপজেলার রণগোপাল সরকার, মধুখালী উপজেলার মতিয়ার রহমানসহ বিভিন্ন এলাকার বেশ কিছু কৃষক ও বীজ ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, ফরিদপুরের ভাঙ্গা ও সদরপুর থেকে তারা পেঁয়াজ বীজ কিনে প্রতারিত হয়েছেন। মাঠে বীজ রোপন করার পর চারা গজালেও পরে তা মরে গেছে। তাদের অভিযোগ, ভাঙ্গা উপজেলার বীজ বিক্রেতা নুরে আলম, শাহ আলম, নাছির, পুখরিয়ার হাবিবুর রহমান হবি, নগরকান্দার বিল্লাল হোসেন ও আকটের চর এলাকার আসলাম মোল্লার কাছ থেকে বীজ কিনেন।

তবে দেশীয় বীজ বলে কৃষকদের কাছে নিম্নমানের ভারতীয় বীজ ধরিয়ে দেন। কৃষক এসব বীজ মাঠে রোপন করে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্থ একাধিক কৃষক জানান, তারা প্রতি বিঘা জমিতে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ করেছেন। কিন্তু বীজ থেকে চারা গজানোর পর তা শুকিয়ে মরে গেছে। ফলে তারা বেশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। আর যাদের কাছ থেকে বীজ কিনে প্রতারিত হয়েছেন সেইসব ব্যবসায়ীদের কাছে অভিযোগ নিয়ে যাবার পর তারা বিভিন্নভাবে হয়রানি এবং ক্ষতিগ্রস্থদের টাকা ফেরত দিতে টালবাহানা করছেন। সভা থেকে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকেরা প্রতারক ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স বাতিলসহ ক্ষতিপূরণের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান।

কৃষকেরা বলেন, ভারত থেকে নিম্নমানের পেঁয়াজ বীজ আমদানি বন্ধ এবং কালোবাজারে আসা এসব পেঁয়াজ বীজ ঠেকানো না গেলে আগামীতে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। তাছাড়া ভারত নির্ভর হলে এদেশের পেঁয়াজ বীজ চাষীরা ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। ফলে দেশে পেঁয়াজের সংকট বাড়বে। তারা পেঁয়াজ বীজ আমদানি বন্ধ করে দেশের বীজ উৎপাদনকারী চাষিদের রক্ষার জোর দাবি জানান।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877